প্রিয় মেঘ,
কেমন আছো? আশা করি ভালো আছো। সুস্থ আছো।আমি কিন্তু খুব একটা ভাল নেই। আর তা শুধু মাএ তোমার জন্য। এই বর্ষাকালে তুমি আমায় একলা ফেলে কোথায় গিয়ে বসে আছো তা বলো তো! কি মজার ব্যাপার বলো তো! তোমাকে আমি মেঘ বলে ডাকি এই কারনে, কারন মেঘের বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়াটা আমার ভাল লাগে। তুই সেই ভালোলাগার প্রথম লগ্নের সুত্রপাত। তোমার অস্তিত্ব আমার কাছে তেমনি যেমন শুকনো মাটির উপর পরা প্রথম বৃষ্টির অনুভূতি। মেঘ, মেঘ থেকে বৃষ্টি, বৃষ্টি যখন মাটিতে পরে সেই যে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় সম্পূর্ণ প্রকৃতিতে সেই স্নিগ্ধতা আমি ভালবাসি। তাই তোমাকে মেঘ বলতে ভালবাসি। কেমন আছো তুমি? আমি ভাল নেই। বুঝতে পারছি পড়াশোনার জন্য দূরে আছো, তাও কি বলতো আমি বুঝি কিন্তু আমার অবুঝ মন বুঝতে চায় না।আচ্ছা একটা মজার কথা জানো, আজকে আমাদের এই দিকে অনেক রোদ ছিল, চারদিকে যেন খাঁ খাঁ করছিল রোদে। ঠিক তখন কথা থেকে যেন আকাশে মেঘ চলে এলো। আর ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। আমার তখন কি মনে জানো আমি তোমাকে পেয়েছি। শুনে হাসি পাচ্ছে তো? কিন্তু কি বলো তো এই জন্যই তুমি মেঘ। তাই যখনি তোমাকে ডাকবো তখনই তেরো হাজার মাইল দূরে থেকে তুমি তুলোর ভেলা হয়ে আসবে আর আমার শুকনো প্রকৃতিতে তোমার করুণা ধারায় স্নিগ্ধ করে দিবে। বৃষ্টি...। হ্যাঁ, মেঘের বৃষ্টি। তোমারই বৃষ্টি।
কবে আসবে তুমি? আজ কেন জানি খুব করে মনে পরছে তোমার কথা। বৃষ্টি তার মেঘের আগমনের প্রতিক্ষায় ব্যাকুল হয়ে উঠছে। আমি এখানে আর তুমি তের হাজার মাইল দূরে বসে আছো। আর আমি কি করছি বলতো! তোমার জন্য এই চিঠি লিখছি। কি অদ্ভুত না বলো! দুটো আলাদা মানুষ তাদের ভাললাগা গুলো এক। এই ধরো চিঠি লেখার ব্যাপারটাই, আজকাল সবাই ই-মেইল, ম্যাসেজ এই সব এ বিশ্বাসী। কিন্তু তুমি আমি কি করি? আমরা চিঠি পাঠায়। যদিওবা ম্যাসেজ আর ভিডিও কল এইসব দেই কিন্তু তাও প্রতি মাসে তোমার চিঠির অপেক্ষায় বসে থাকি যেটা তুমি নিজ হাতে লিখে পাঠাও। অদ্ভুত না? তাও এই কাজের মাঝেও যেন অন্য একটা ভাললাগা ভালবাসা কাজ করে। তুমি যখন প্রথম বলেছিলে যে প্রতি মাসে তোমাকে একটি করে চিঠি লিখতে হবে, যতদিন তুমি ওখানে থাকবে ততদিন। তখন মনে হয়েছিল এটা কেমন ধরনের কথা! এই যুগে কি কেউ চিঠি লেখে, কিন্তু তখন আমি বুঝতে পারলাম যে তুমি আসলেই অন্যরকম। আমি বুঝতে পারলাম তোমার অনুভূতি, যখন তুমি বললে আমার হাতের লেখার মাঝে তুমি আমাকে খুজে পাবে, আমার অস্বিত্ব ঐ তেরো হাজার মাইল দুরে বসে থাকে। সত্যিই তখন চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। তখন থেকে অপেক্ষা করি মাসে কখন তোমার চিঠিটি আসবে। আর আমি কখন আমার লেখা চিঠিটি তোমাকে পাঠাবো। এতা আসলে চিঠি নয় আমাদের দুজনের যোগাযোগ সুত্র।
আচ্ছা অনেক তো বললাম এদিক সেদিকের কথা, এখন বলছি জরুরি কথা। জরুরি কথা হলো নিজের দিকে খেয়াল রেখো। ভিডিও কলে দেখালাম তোমার চোখের নিচে ইয়া বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। গর্তগুলোতো ভালো না। পড়াশোনা করছো ভালো কথা নিজের যত্ন ও তো নিতে হবে নাকি। নিজের যত্ন নিও আর পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ দিও। আর হ্যাঁ এর পরের বারে যে চিঠিটা পাঠাবে হাতের লেখাটা দয়া করে একটু সুন্দর করে লিখো, কি যে লিখো কিছুই বুঝা যায় না। উফফ! ইঞ্জিনিয়ারদের হাতের লেখা একরকম হয় নাকি। তাহলে অঙ্ক কি করে করো বলতো! জানি না বাপু। আমার হাতের লেখা সুন্দর। ইংরেজি সাহিত্যে পড়া মেয়ে বুঝতেই পারছো। হাতের লেখা ঠিক করো নইলে খবর আছে।
আচ্ছা ভালো থেকো, কথা হবে। আমার চিঠি লিখতে ভুলোনা যেনো। চিঠির মাধ্যমে অনুভূতি জানার মজাটাই আলাদা। তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকবো, ম্যাসেজের নয় কিন্তু অনেক ভালোবাসা রইলো।
ইতি
তোমারই বৃষ্টি