Wednesday, January 13, 2016

সুন্দরীর বাবা

আংকেলঃ মাস্টার্স তো শেষ, কাম কাজ কি করছো এখন?
বেকারঃ জব তো পাচ্ছি না !
.
আংকেলঃ পাচ্ছো না মানে?
বেকারঃ জব তো সুন্দরী মেয়ের মতো, "আসি আসি বলে আসে না !"
.
আংকেলঃ সুন্দর বলছো, আরেকটা উদাহরণ দাও ?
বেকারঃ চাকরি আমার টিউশনির মত, "পরের দিন হবে হবে বলে বেতন আর হয় না !"
.
আংকেলঃ এই নাও আমার কার্ডটা রাখো !
বেকারঃ জ্বি আংকেল এর আগে ও তিনটা দিয়েছিলেল কার্ড যাক চারটা হলো ৷
.
তুমি ছেলেটা অনেক মজার ৷ একটা কথা বলি কি চার পাঁচ হাজার টাকা হলে ঢুকে যাও ! পরে দেখবা টাকা হুহুহু করে বাড়বে ৷ ছাত্র ভালো, পড়ালেখায় ভালো, সাবজেক্ট ভালো, আদ্দব লেহেজ ভালো সুতরাং ঢুকে যাও, মেয়েটা ও বড় হচ্ছে আমার ! তার পড়ালেখা নিয়ে টেনশনে আছি !
.
"না আংকেল মেয়ে বড় হয়নি এখনো, দুই বছর পর বড় হবে, চাকরি একটা ধরে নি পার্ট টাইম ওকে ম্যাথ বুজিয়ে দিয়ে আসবো ৷"
.
আংকেলঃ কি খবর চাকরি বাকরির ?
বেকারঃ হয়ে যাবে আগামী মাসে কিন্তু সেলারি কম ! তের দিয়ে শুরু হবে ৷
.
আংকেলঃ দেখো দ্রব্য মূল্যের দাম যে হারে বাড়ছে আরো ভালো জব দেখো ৷
বেকারঃ আচ্ছা আংকেল ৷
.
আংকেলঃ কি বেকার? আকার হয়েছে?
বেকারঃ জ্বি আংকেল ৷ অমুক ব্যাংক বিশ হাজার দিয়ে শুরু !
.
আংকেলঃ তা তো বুজলাম ! ছেলে মেয়ে মানুষ করতে পারবে না ৷ সারাদিনতো অফিসে থাকবা ! সরকারি চাকরি দেখো !
বেকারঃ জ্বি আচ্ছা আংকেল ৷
(মনে মনে, চান্দু তোমার সুন্দরী মেয়েটা না থাকলে বুজাইতাম কত ধানে কত চাল)

ফিরে আসার গল্প

সাল:২০০৬
(নিঝুম রাস্তা দিয়ে যাবার সময় হটাৎ রনি পথ আটকালো।)
---তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।(রনি)
---জি ভাইয়া বলেন। (নিঝুম)
---আমি তোমাকে ভালবাসি।
---কি বলেন আলতু ফালতু কথা। আপনার লজ্জা করেনা?
ক্লাস ১০এ পরে একটা ক্লাস ৬এর মেয়েকে প্রপোজ করেন।
আমি আপনি বড় ভাইয়ের মত দেখছি।
আর আপনি এত নিচু তা আগে জানতাম না।
---আমি সত্যিই তোমায় ভালবাসি।
---আমি কি বলছি আমাকে ভালবাসতে? ?আর কখনো আমাকে এইসব বলে বিরক্ত করবেন না।তাহলে আব্বুকে বলে দিব।
---কথাটা বুঝার চেষ্টা কর।
(নিঝুম কথা না শুনেই চলে যায়।রনি ওদের দুঃসম্পর্কের ভাই।রনি নিঝুমকে ভালবাসে।নিঝুম এইসব কম বুঝে তাই এইসব জিনিসে নিজেকে জরাতে চায়না।পরেরদিন কোচিং এ যাবার সময় রনি আবার নিঝুমের সামনে আসে।)
---কেমন আছো? (রনি)
---ভালো,আপনি?
---যেমন রাখছো।
---আপনি আবার শুরু করছেন?এইবার কিন্তু আমি বাবার কাছে বিচার দিবো।(ক্ষেপে গেছে)
---আচ্ছা, বাই
---বাই।
-
.
.
এইভাবে কয়েকদিন রনি নিঝুমকে তার ভালবাসা দেখাতে চেষ্টা করে।কিন্তু নিঝুম তা মানে না।নিঝুম এক সময় ওকে অনেক গালাগালি আর কটুকথা বলে।রনি এইবার তার ভালবাসাটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে।তাই সে নিঝুম কে কম বিরক্ত করে।
.
.
সাল:২০১০
(নিঝুম এখন ক্লাস ১০এ পরে।বাবা মা তাকে ফোন কিনে দিছে ।কারন তাকে পড়াশোনার কিশোরগঞ্জ থাকতে হয়।
খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যই ফোন দেয়।
এর মধ্যে রনি নিঝুমের ফোন নাম্বার জোগার কইরা ফেলে। প্রায়ই ফোন দেয়।নিঝুম আত্বীয় হিসেবে কথা বলত।একদিন বিকালে রনির নাম্বার থেকে নিঝুমের ফোনে কল যায়। কল রিসিভ করতেই, ,,)
---হ্যালো ভাইয়া বলো।
---নিঝুম আমি তোর কাকা।
---আসসালামু আলাইকুম।
---ওলাইকুম আসসালাম।
(কাকার সাথে কথা হওয়ার পর নিঝুম কিছুটা বিস্মিত হয়।তার কেন যেন মনে হচ্ছে রনির জন্য কিছুটা হলেও ফিলিংস আছে।আর কিছুদিন ধরে রনি তার এক বন্ধুকে দিয়ে আবার নিঝুমকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে।অন্যদিকে নিঝুম তার এক বান্ধবীর সাথে থাকত।সেও নিঝুমকে বোঝায় যে রনি তার জন্য উপযুক্ত। আর নিঝুম নিজেও কিছুটা উপলব্ধি করে।আর সে এখন কিছুটা হলেও ম্যাচিউর।)
.
.
.
সাল:২০১০। ফেব্রুয়ারি ৫
(অবশেষে রনির সত্য কথার জালে নিঝুম ফেসে যায়।রাতে নিঝুম নিজেই রনিকে কল দেয়।তারপর, ,,)
---হাই। (নিঝুম)
---হাই।(রনি)
---কি করেন?
---তোমায় মিস করি।
---ও তাই।
---হুম
---ভাল।আমিও তোমায় অনেক মিস করি।
---অই তুমি আমাকে তুমি বলছ?
---হ্যা।আর সবসময় বলব।
---আই লাভ ইউ নিঝুম।আমি তোমায় অনেক ভালবাসি।
---কেন?
---জানিনা।
---আমিও তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি রনি।
---কি বল তুমি?আজ আমার মনের আশা পুর্ন করে দিলা তুমি।আই লাভ ইউ সো মাচ।
.
.
.
(নিঝুম আর রনির রিলেশন সেইদিনের পর থেকে কনটিনিউ চলে।রনির সাথে রিলেশন হওয়ার পর সে রনিকে একদিন না দেখলে পাগল হয়ে যেত।এমন দিন আছে যে সে নিজেই রনির বাসায় চলে যেত রনিকে দেখার জন্য।নিঝুম সবসময় রনিকে সাপোর্ট দিত।সে অনেক কিছু করেছে রনিকে সারাজীবন কাছে পাওয়ার জন্য।যমযমের পানি,শবে বরাতের নামাযে শুধু ওকেই চেয়েছে।যখনি বিয়ের কথা উঠতো তখনি আল্লাহর নাম নিতে বলত রনিকে।)
.
.
.
সাল:২০১৫।নভেম্বর
(নিঝুম রনিকে ফোন দেয়।)
---হ্যালো।(নিঝুম)
---হা।বল।(রনি)
---তুমি আমাকে এড়িয়ে চলছ কেন কিছুদিন যাবত?
---কই নাতো?
---মিথ্যা বলনা।
---আসলে আমার ফ্যামিলিতে আমার আর তোমার ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেছে।আর বাবা মা রাজীনা তাই আমি তোমায় বিয়ে করতে পারবনা।
---কি????
---হ্যা, বাই।ভালো থেকো। আর আমাকে ভুলে যাও।
---অই শুনো।
(রনি ফোন কেটে সুইচ অফ করে দেয়।নিঝুম পাগলের মত কান্না শুরু করে।একসময় নিঝুম রনির এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারে রনি তার সাথে ভালবাসার অভিনয় করেছে।কিন্তু নিঝুম তা বুঝতে পারেনাই।আজ ওদের রিলেশন ব্রেক আপ এর ২মাস।নিঝুম আজও রনির ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করে।)
…….
…..
….
..…
…….সত্য ঘটনা অবলম্বনে

একটা জন্মদিন একটু দুষ্টুমি

ভালোবাসা শব্দটা আমাদের মনে এক স্বর্গীয় অনুভূতি জাগায়। আর এই ভালোবাসা যার জন্য আমাদের কাছে সে একদিকে আর পৃথিবীর সবকিছু অন্যদিকে থাকে। তেমনি আমার ভালোবাসার মানুষটাও আমার কাছে সবচেয়ে দামী। ওর নাম অধরা। আজ অধরার জন্মদিন। সে এদিনই পৃথিবীতে এসেছিলো। আল্লাহর কাছে মনে মনে অসংখ্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম এই মেয়েটিকে আমার জীবনে এনে দেওয়ার জন্য। কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম অধরার জন্মদিনে ওকে সারপ্রাইজ দিবো।তাই একটা প্লান করলাম মনে মনে।অধরা আমাকে সত্যিই ভালোবাসে কিনা সেটা একটু পরীক্ষা করার জন্য তাকে অন্য নাম্বার থেকে ভয়েস পরিবর্তন করে ফোন দেই।কয়েকদিন ধরেই ওকে অন্য নাম্বার থেকে কল দিয়ে বিরক্ত করছি। কিন্তু আজ ওর জন্মদিন বলে শেষবারের মত ডিস্টার্ব করে তারপর তাকে সব বলে দিয়ে সারপ্রাইজ দিবো। তাই সকাল সকাল ফোন দিলাম অধরাকে,
.
---আপনাকে কতবার বলেছি আমাকে ফোন দিবেন না।আপনি আমার ধর্মের ভাই হন, আমাকে আর জ্বালাবেন না প্লিজ।
---প্লিজ আপনি রাগ করবেন না।মানুষকে রাগানো ইতর প্রজাতির লোকের কাজ।আমি ইতর না, আমি মানুষ
.
---কিইইই বললি!!! ঐ বজ্জাতের হাড্ডি!! একবার আমার সামনে আয়, তোকে সন্ন্যাসী বানিয়ে জঙ্গলে ছেড়ে আসবো।
---আহ্হা!! শান্ত হোন! আমিতো ইতোমধ্যে আপনার প্রেমে সন্ন্যাসী হয়েই আছি।আপনার ভালোবাসার রং আমার অস্তিত্বে ঢুকে গেছে।আমি আপনার ভালোবাসার বৃত্ত হতে বের হতে পারছি না। দয়া করে আমাকে তুমি করে বলার অনুমতি দিন।
.
অধরার মেজাজটা গরম হচ্ছে। নাহ!! এখনই মেজাজ খারাপ করলে চলবে না। আমাকে কঠিন কিছু কথা বললে আর কাজ হবেনা মনে হচ্ছে তার। তাই অধরা শান্ত হয়ে আমাকে বলে,
.
---ভাইজান, অনুমতির কথা বাদ দেন.. আপনি কি সকালে নাস্তা করেছেন ?
---জি না, সকালে নাস্তা করতে পারি নাই।তবে আপনি হুকুম দিলে নাস্তা করবো।আপনাকে ফোন না দিলে আমার নাস্তা হজম হয়না, বমি হয়।
---সমস্যা নাই আমার কাছে বমির বড়ি আছে।লোক পাঠিয়ে নিয়ে যাবেন আর ঠিকঠাক মত নাস্তা করবেন।নইলে শুকিয়ে যাবেন আর শুকনা মানুষ আমার পছন্দ না। বোঝা গেল জনাব??
.
---জী বুঝেছি মেমসাহেব।
---তা, মহাশয় সাহেব, আপনি এত সকালে আমাকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করতেছেন কেনো?আপনাকে তো সকাল বিকাল দুইবেলা করে নিয়মিত ঝাড়ুপেটা করা উচিত।আপনার গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে মাথা ন্যাড়া করে সারা বাংলাদেশ সাত বার ঘুরানো দরকার।
---অধরা তুমি হঠাৎ এরকম করছো কেন? তোমার কি হইছে?
---হারামি, আবার কথা বলতেছোস!!
এত্ত সাহস তোর আমাকে নাম ধরে ডাকছোস!! তোর সাথে এরকম কথা বলবো নাতো কি প্রেমের কথা বলবো? আর কোনো দিন ফোন দিলে তোর হাড্ডি ভেঙ্গে ফেলবো, ইতর ছোটলোক..!!!
.
উফফ!! কিইই রাক্ষসী মেয়েরে বাবা!!
আমিও হাল ছাড়িনাই। আজ শেষবারের মত দেখবো অধরার মেজাজটা কেমন হয়।
.
অধরাকে আবার ফোন দিলাম...
---আপনাকে কিভাবে অপমান করলে আপনি আমাকে ফোন দিবেন না। মানুষকে যন্ত্রনা দিয়ে আপনার কোন লাভ আছে? (অধরা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে)
.
---অপমান করা ভদ্র মানুষের কাজ না। যেহেতু আমি আপনাকে ভালোবাসি তাই আমি আপনার অপমান সহ্য করব।
কারন যখন আপনি আমার বউ হবেন তখন তো আর অপমান করবেন না হিহিহি!!
---আপনার মতো ইতর ছোটলোক নিম্ন প্রজাতির প্রাণীকে কে বিয়ে করবে? আমি..? খামাকা আমারে বিরক্ত করবে না। আমি আপনার পায়ে পড়ি।
.
---দেখো, অধরা তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। তোমার জন্য যদি একশো বছরও সাধনা করতে হয় আমি করবো। তোমাকে না পেলে ছয় তলার উপর হতে লাফ দিবো (হায় হায় আমি ইহা কি বলিলাম)
---আপনি বরং এভারেস্ট এর উপর হতেই লাফ দেন জনপ্রিয় হয়ে যাবেন।
শোন হারামি, তোকে আপনি আপনি বলে বলছি বলে তোর গায়ে লাগছে না। তুই একশো বছর কেন এক কোটি বছর সাধনা করলেও আমার মনের একশ কোটি গজের মধ্যেও আস্তে পারবি না।
তোর সাথে দেখা হলে এক হাজার একটা থাপ্পড় দিতে ভুলব না। বুঝলি!! তুই এবার ফোন রাখ। তোর সাথে প্যাঁচাল পারার টাইম নাই।
.
অধরা ফোন রেখে দিলো। আমি জানি অধরা একটু পর আমার সাথে দেখা করতে বের হবে। আর এখন সাজগোজ করবে তাই নিজের রূমে আয়নার সামনে নিজেকে সাজাচ্ছে হয়তো।
যাহোক পরীক্ষা শেষে বুঝলাম, অধরাকে অন্য কোনো ছেলে পটাতে পারবেনা। মনে মনে খুব খুশিই হলাম। নিজেকে আজ খুব ভাগ্যবান মনে হলো। নাহ!! আমার বাবুটাকে অনেক জ্বালাইছি, আর না। বেচারিকে একটু রেস্ট দেই।
.
আমার ফোন আবার বাজছে..! এবার দেখি অধরা আমাকে ফোন দিচ্ছে আমাকে,,,
.
---হ্যালো জান!! কি করছো? কখন আসবা তুমি? একদম ১০টায় তুমি রেস্টুরেন্টে থাকবা। একমিনিট দেরি হলে কিন্তু তোমাকে ১০বার করে কানে ধরে উঠবস করতে হবে।
---জান, তাহলে তো আমাকে একশো বার উঠবস করতে হবে কারন আমার ১০মিনিট দেরি হবে।
---ফাজলামি রাখো, তাড়াতাড়ি আসো বুঝছো?
.
আমি দশ মিনিট দেরি না বরং দশ মিনিট আগেই রেস্টুরেন্টে এসে বসে বসে অপেক্ষা করছি অধরার জন্য। অধরা আমার দিকে এগিয়ে আসছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। এসেই আমাকে বলল,
.
---বাহ!! আজ তোমাকে জিন্স-টিশার্টে অন্যরকম লাগছে। আজ প্রথম তুমি আমার আগে আসছো তাই তোমাকে এত্তোগুলো থ্যাংকস!!
---শোনো, তোমাকে একটা ইম্পোর্টেন্ট কথা বলবো।
---তাড়াতাড়ি বলে ফেলো।
----তুমিতো জানো আমার আব্বু অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। আব্বু আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। তাই আব্বুর জন্যই আগামী মাসে আমি অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাচ্ছি। তুমি আমাকে ভুলে যাও।
---ওহহ, তারমানে তুমি কি ব্রেকআপ চাচ্ছো?
--হ্যা,তুমি বরং অন্য কাউকে খুঁজে নিও। আমি চাচ্ছি আমাদের রিলেশন এখানেই শেষ হোক।
.
দেখলাম অধরার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। আমার এই পাগলামীর জন্য বেচারী অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আমিও এখন কষ্ট পাচ্ছি।আমি ওকে একটা চিরকুট দিয়ে বললাম,
---তুমি রেস্টুরেন্টের বাইরে গিয়ে এই কাগজটা পড়বে। পড়ার পর যদি মনে করো আমি সঠিক তাহলে আমাকে এসে একটা ধন্যবাদ দিয়ে যাইও।
.
অধরা বাইরে গিয়ে চিরকুট টা পড়ছে। তাতে আমি লিখেছিলাম,
"অধরা তুমি এতো বোকা কেন? এজন্যই তো তোমাকে আমি এতো ভালোবাসি পাগলী।আমার ভয়েস পরিবর্তন করে অন্য নাম্বার থেকে ফোন করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তোমাকে আমি পটাতে চাইছিলাম। দেখলাম, তুমি আমাকে এত্তো ভালোবাসো যে তোমাকে অন্য ছেলেরা কখনো পটাতেই পারবেনা। আর এটাও দেখছিলাম তুমি কষ্ট পেলে কি কি করো। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ জান। তোমাকে একটু কষ্ট দিলাম কারণ কষ্টের পর একটু সুখকে ও অনেক বেশি মনে হয়।
.
অধরা ভেতরে চলে আসতেই আমি হাঁটুগেরে বসে তার হাতে একটা গোলাপ দিয়ে বললাম,
"Thinking Of You With Love On Your Birthday And Wishing You Everything That Brings You Happiness Today And Always.. Happy Birthday To You My Sweetheart".
.
এবার দেখি অধরার চোখে আনন্দ অশ্রু জ্বলজ্বল করছে।জল মুছে আমার গোলাপটা হাতে নিয়ে আমাকে বললো,
"When I Am With You, I Feel I'm In Heaven...There Were Times You Make Me Cry...There Were Times You Make Me Fly..Stay With Me Until I Die..Stay With Me Forever"

আনন্দ অশ্রু

আবাসিক হোটেলটার সামনে এসে বাইকটা থামিয়ে ফেলল রিয়ান।
আজ হঠাত্ করেই রিয়ানের ওই হোটেলে প্রবেশ করতে ইচ্ছে হচ্ছে। প্রায় অনেক বছর যাবত রিয়ান এই এলাকায় থাকে। একটু ফাজিল টাইপের হলেও রিয়ান ওই আবাসিক হোটেলের দিকে চোখ তুলেও তাকায় না।
আজকে হঠাত্ করেই বাইকটা থামিয়ে ভিতরে চলে গেল রিয়ান।
কিরকম অজানা একটা কিছু ওকে টানছে?
তাই রিয়ান আর ফিরতে পারনি।
আজ রিয়ানের খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে কেন এই অন্ধকার ঢুকছে মেয়েরা। এই জঘন্য কাজ ছাড়া আরও অনেক কাজও তো করতে পারে?
...
কিছুক্ষণ পর রিয়ান একটা ঘরে প্রবেশ করলো, ও ঠিক যেই রকমটা খুজঁছে সেই রকম একটা মেয়ে পেয়েছে।
মেয়েটা খাটের এককোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।
রিয়ার একটু ইতস্তত হয়ে মেয়েটার কাছে গেলো। রিয়ানের খুব খারাপ লাগছে, কি জানে মেয়েটা ওকে কি ভাবছে?
,,,
- এইযে শুনছেন আমি রিয়ান। পাশেই থাকি। কলেজে পড়ি। আগে কখনও আসিনি, আপনার নামটা একটু বলবেন?
> ঋতু। এতক্ষণে মেয়েটা রিয়ানের দিকে তাকিয়েছে।
- অদ্ভুদ এই মায়াবী চাহনী দেখে রিয়ান একটু অস্বস্তি বোধ করে। ও ভাবে, এত মায়াবী একটা মেয়ে এরকম একটা জঘন্য কাজে লিপ্ত?
আচ্ছা আপনি এরকম কাজ করেন?
> আপনি এত প্রশ্ন কেন করছেন? আপনি যা করতে এসেছেন তা করে চলে যান? আপনি যদি ভালো হতেন তাহলে এরকম একটা জায়গায় কেন?
- না না বিশ্বাস করুন। আমি কিছু করতে আসিনি। আমি ততটা খারাপ না। আমি শুধু জানতে এসেছি।
> সত্যি আপনি কিছু করবেন না। (চোখের জল যেন বেরিয়ে আসলো)
- নাহ। বিশ্বাস করতে পারেন।
> বিশ্বাস করুন, আমি পতিতা না। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। বলতে কেদেঁই ফেলল ঋতু।
-রিয়ান কিছু বলতে পারছে না।
,,,
মেয়েটার নাম ঋতু। ও গ্রামে থাকে। ওদের পরিবারে ওরা এক ভাই এক বোন।
ঋতু পরিবারের সাংসারিক খুব একটা ভালো না।
এরই মধ্যে ঋতুর ছোট ভাইটা অসুস্থ হয়, আর তাকে অপারেশন করার জন্য প্রায় পাচঁ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়।
কিন্তু ঋতুর পরিবারের এতগুলো টাকা দেয়ার ক্ষমতা ছিলোনা। তাই তার বাবা ওদের এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ঋণ নেয়, বিনিময়ে ঋতুকে ওদের বাসায় থেকে ওদের বাচ্চাগুলোকে দেখাশুনার কাজ করতে হবে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হয় ঋতু।
এরপর ঢাকায় এনে এই আবাসিক হোটেলে দিয়ে চলে যায় ঋতুকে।
,,,
ঋতু প্রথমে বুঝতে পারেনি, কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছে তখন ঋতুকে একটা ঘরে বন্দী করা হয়েছে।
,,,
এসব শুনতে শুনতে রিয়ানের চোখ দিয়ে কখন জল চলে আসলো সে নিজেও বলতে পারেনা?
,,,
- আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে আপনার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।
> সত্যি বলছেন?
- হ্যাঁ। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
,,,
একথা বলেই রিয়ান বেরিয়ে আসলো ওই ঘর থেকে। ঋতু তবুও কাদঁছে, ভাবছে আদৌ কি রিয়ান কিছু করবে? নাকি আর আসবেনা।
,,,
রিয়ান হোটেলের বাইরে আসলো। ওর মাথায় বাজ পরেছে। ঋতুকে ওখান থেকে আনতে তিন লক্ষ টাকার প্রয়োজন।
কিন্তু এই মুহুর্তে রিয়ানে পকেটে তেমন টাকা নেই।
বাসায় কিছু বলতে পারবেনা এই সর্ম্পকে।
কিন্তু মেয়েটাকে সে কথা দিয়েছে।
আজ রাতেই টাকা জোগাড় না করলে, মেয়েটা ওকে খুব খারাপ ভাববে। আবারও কারো উপরে বিশ্বাসের মর্যাদা হারাবে।
,,,
পরদিন সকালে রিয়ান হাসিমুখে যাচ্ছে আবাসিক হোটেলটার দিকে, যাবার পথে একটা কালো বোরখা কিনেছে রিয়ান।
কালো বোরখা পরা মেয়ে রিয়ানের খুব পছন্দের। ঋতুকেও খুব ভালো লাগবে।
.
হ্যাঁ, রিয়ান তার পছন্দের বাইকটা বিক্রি করেছে।
আর সেই টাকা দিয়েই ঋতুকে ফিরিয়ে আনবে।
,,,
কিছুক্ষণ পর রিয়ান ঋতুর সামনে এসে দাড়ালো। ঋতুর বিশ্বাস হচ্ছেনা কিছুতেই। বিশ্বাস হচ্ছেন ও আবার ওর মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খাবে।
রিয়ান বোরখাটা এগিয়ে দিলো, এবং তাড়াতাড়ি বাইরে আসতে বলল।
ঋতুকে বোরখায় এত সুন্দর লাগছিলো রিয়ান যেন স্বপ্নে কাউকে দেখছে।
।।
অতঃপর ঋতুকে নিয়ে রিয়ান ওদের বাড়িতে চলে এলো।
ঋতুকে এতদিন পর কাছে পেয়ে ওর বাবা-মা খুব খুশি হল। এতদিন পরে আপুকে দেখে ওর ভাইটাও অনেক খুশি।
ঋতুর মা কাদঁছে, কিন্তু কান্নাটা সুখের। রিয়ান একটু দূরে দাড়িয়ে এসব দেখছে। সবাই পেয়ে ঋতু যেন রিয়ানকে ভূলেই গেলো।
রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পিছন দিকে হাটঁতে লাগলো। রিয়ানে বুকটা যেন আজ ব্যথা করছে।
খুব দামী কিছু একটা আজ ও রেখে যাচ্ছে।
অজান্তেই চোখের দুফোটা জলের অস্তিত্ব পেলো রিয়ান।
এমন সময় কেউ একজন পিছন থেকে ডাক দিলো। ডাকটা খুব চেনা রিয়ানের।
রিয়ান দাড়ালো।

> বাহ। খুব ভালো। না বলেই চলে যাচ্ছেন।
- আমারতো আর কাজ নেই। তাই চলে যাচ্ছি।
> আপনার ঋণটা পরিশোধ করার সূযোগটা দিবেন না?
- সারাজীবন থাকলে দিতে পারি?
> সত্যি কি তাই রাখবেন?
- হুম। এবারও বিশ্বাস রাখতে পারেন।
,,,
তারপর রিয়ান আলতো করে ঋতু কোমল হাতটা ধরলো। ঋতুর চোখে এবার খুব আনন্দের দুফোটা অশ্রু জমা হলো। আর রিয়ান তা মুছে সারাজীবনের জন্য কাছে টেনে নিলো ঋতুকে।
এবার আপনি ডাকা থেকে তুমি করে ডাকার পালা।।

এক শিশি ভালবাসা

সৃষ্টিকর্তা মানুষের মাঝে কিছু অসাধারণ ক্ষমতা
দিয়েছেন। প্রতিটা মানুষ এর সাথে প্রিয়মুখ গুলোর
রয়েছে আতাঁতের নিরবিচ্ছিন্ন বন্ধন॥ চোখটা নিমলীত
করলেই স্মৃতির জানলা বেয়ে উড়াউরি করে এসব
প্রিয়মানুষ। রাগ,অভিমান বা শেষ বিদায়ে হয়ত
মানুষগুলো আধাঁরের শহরে নুইয়ে যায় কিন্তু স্মৃতিগুলো
অমর হয়ে জ্বলজ্বল করে হৃদয় কুঠিরে। ইচ্ছা না থাকলেও
কোন এক অলৌকিক শক্তি বলে কাছে পরাজিত হতে হয়
মাথাচাড়া দিয়ে উঠা স্মৃতির কাছে। প্রিয় এইসব মানুষ
গুলোর কাকতলীয় ভাবে প্রত্যেকের ইউনিক পাসওয়ার্ড
আলাদা। এদের সন্তপণে পায়ের চলার শব্দ,শব্দহীন
দীর্ঘনিঃশ্বাস,পদাঙ্ক,হাসি,কান্
না,অভিমান যেন
সহস্র বছরের চিরচেনা, স্মৃতিগুলো কত আপন॥
.
ছোট্ট শিশুটি ঠিকই বুঝে নেই বাবার বাইকের ভটভটানি
কিংবা নষ্ট সাইকেলের কুচকুচানি॥
.
মাতৃভাষা গলাধঃকরণের বহু আগে বুঝে যায় জননীর
চোখের ভাষা, ভাষাগুলো ভিন্ন কেবল সন্তানই বোঝার
ক্ষমতা নিয়ে ধরণীর বুকে এসেছে॥ কোন ভাষা বলে
"বাবু,দুধ খেয়ে যায়", "বাবা মারবো বলো চুপ করে বসো!"
.
গভীর রাতে কনকনানি শীতে জবুথবু হয়ে বসে থাকা
জননী কাঠের দরজার উপর টকটকানি শুনে এক লাফে উঠে
সন্তানকে বুকে আগলে ধরে আলতোভাবে কপালে একটা
চুমু একে দিয়ে বেশ
চিন্তাভরা মুখে বলে" আসতে এত লেট করলি কেন
খোকা,পথে কোন বিপদ হয়নিতো?" তারপর এক বাসন ভাব
উড়ানো ভাত নিয়ে বলে "খোকা, আয় খাবি"। পাশের
ঘরে প্রিয়তমা হয়ত কাথাঁটা আর একটু গুছিয়ে ঘুমের
দেশে সপ্নে খুজছে কিন্তু তিরতির করে কাঁপতে থাকা
মা কিন্তু দরজায় করাঘাত শুনে চিনতে ভুল
করেননি,করবেনও না। প্রত্যেকটা মানুষের কাছে তার
প্রিয়জনের গায়ের এক শিশি গন্ধ বেশ যত্ন করে
আলমারিতে উঠিয়ে রাখে,যখন মনে পড়ে তাদের শিশি
থেকে একটু গন্ধ নেই।
.
ভাইয়ে ভাইয়ে যেখানে এক কোদাল মাটি নিয়ে
হাঙ্গামা,ভাইয়ের বিপদের গন্ধ শুকতে শুকতে সবার আগে
পৌছে যায় ভাইকে বাঁচাতে। সহদর এর রক্ত কখন
বেঈমানী করতে শিখেনী।
.
প্রবাসে থাকা ভাইটার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে
স্নেহময়ী বোন। ফ্রেমবন্দি ছবিটা দিকে নিরীহ
চাউনিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে "ভাইয়া,তোকে
অনেক মিস করিরে,তাড়াতাড়ি বাড়ি আয় না ভাই
আমার??। ওপাশে ভাইও ফ্রেমবন্দি বোনের ছবিটার উপর
আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে বলে" কেমন আছিস ছটু(ছোট
বোন),বাড়ি ফিরে তোর বিয়েটা আগে দিব,আর কটা দিন
অপেক্ষা কর মিষ্টি বোন,মাকে দেখিস,বাবার কাশিটা
বেড়েছে তাইনা?
ফ্রেমবন্দি মানুষ গুলো যেন ছবিতে কত জীবন্ত যেন এই
হাসছে একটু কাঁদে...ভালবাসা কখন ফ্রেমবন্দি
থাকেনা।
.
বেস্টফ্রেন্ড গুলোর সাথে মাত্রাতিক্ত মান-অভিমান
এর পর হয়ত অনেকদিন কথা হয়না তবুও কোন এক সময় বন্ধুর
কথা মনে পড়তেই কোন এক স্মৃতি আকড়ে ধরে বলবে "ভাই/
বোন,কেমন আছিস?তোর এত রাগ কেনোরে? তোকে
অনেক মিস করছিরে..জানিস তুই মজা করে যে ঠান্ডা দুধ
চা খাওয়ায় ছিলে আমি কখনও ভুলবোনারে,মাঝে মাঝে
আমার অনেক হাসি পাই,হাসি পাগলের মত,তুই ফিরে
আইরে""
.
প্রিয় মানুষ গুলোর অদৃশ্য অস্তিত্ব বড্ড আপন,সময়ে-
অসময়ে এরা হাজির। ছেলেটা ও মেয়েটার মাঝে
ব্রেকআপ হলেও স্মৃতিগুলো স্টিলআপ হয়ে বেচে থাকে।
কোন না কোন স্মৃতি রয়েই যায়। গাড়িটে যাওয়ার সময়
দেখা কোথা থেকে ভেসে আসছে অতি সুপরিচিত
পারফিউম এর ঘ্রাণ যেটা প্রিয়মানুষের কাছ থেকে
পাওয়া গিফট ছিল মনে পড়ে যাবে তার কথা এমন স্মৃতির
রিইউজ যে কত মোকাবেলা করতে হয় তার ইয়ত্তা নেই।
তমুখ(প্রিয় মানুষের নাম) টেইলার্স,তমুখ
পাবলিশার্স,তমুখ বইঘর,তমুখ ইন্টারপ্রাইজ,তমুখ(নতুন
ফ্রেন্ড),তমুখ সংঘ,তমুখ নামের অন্য কেউ বা তার
কমেন্ট,তমুখ.....
তমুখ গুলো দেখেই মনে পড়ে যায় পুরোনো মুখের অস্তিত্ব
মাখা শত স্মৃতি। ভালোবাসার সুতোয় গাথা অমুখ-
তমুখেরা অতি আপন।
বেচে থাক ভালোবাসা,সুখে থাক তমুখেরা।
.
অভিমানের তাড়নার বা ওপারের দেশের ভিড়ে হারিয়ে
যায় প্রিয়মানুষ গুলো,মৃত্যু হয় কেবল রক্তমাংসের এক
নিহর দেহের,মৃত্যু হয়না ভালোবাসার। ফেলে যাওয়া
স্মৃতিগুলো লেপ্টে থাকে ডাইরির পাতায় কিংবা
ফ্লাশ ব্যাক মেমোরীতে কিংবা মনের আলমারিতে
সযত্নে রাখা এক শিশি ভালাবাসা মাখা গায়ের গন্ধে।
গভীর রাতে শিশি থেকে গন্ধ ভরা স্মৃতি গুলো মেতে
উঠে অটুট হাসিতে কিংবা নিভৃতে করূণসুরে ডুকরে ডুকরে
কেঁদে চলে...

শেষ বিকেলের মেয়ে

_______________আমি তখন বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে শেষ বিকেলের আলো দেখছিলাম। প্রায় সময়ই আমি এমনটা করি। ভালো লাগে। অকারণে মন খারাপ হয়ে থাকলেও ভালো হয়ে যায়। কেমন যেন মায়ামোহ ঘোর লাগা পরিবেশ। বরাবরের মত আজ বিকেলেও তাই নিয়ম করে বেলকোনিতে গিয়েছিলাম। আমাদের পাশের এপার্টমেন্টে এক নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। আমাদের বাড়িটা একটু পুরোনো। তাই বেলকোনি সিঁড়িঘর সবকিছুই পুরোনো ধাচের। আমাদের বাড়ি আর পাশের বাড়ির মাঝ খান দিয়ে একটা সরু গলি চলে গিয়েছে।
`
`
______________২২শে ডিসেম্বর থেকে সূর্যের দক্ষিণায়ন হয়। আর তাই এই সময়টায় সূর্যটা আমাদের বাড়ির ছাদ থেকে তাদের এপার্টমেন্টের ছাদে আঁছড়ে পরে। বিষয় সেটা না! এটা প্রকৃতির নিয়ম, আমি রোজই দেখে আসছি। কিন্তু আজ যা হল তা আমি আগে কখনো ভাবিনি। সূর্য বাড়ি যাবার জন্য যখন দিগন্তটা ছুঁয়েছে তখন সে বাড়ির মেয়েটা এসে ছাদের কর্ণারে এসে দাঁড়ায়। সূর্যটা তার পেছনে পরে যায়। মেয়েটা এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল যেন তার ভেতর থেকেই সূর্যটা গোধুলী আলো ছড়াচ্ছে! অন্তত আমার দিক থেকে এমনটাই মনে হয়েছে.......
.
.
______________এখন রাত। প্রাণোচ্ছল শহরটা ঘুমিয়ে পড়েছে। চারপাশের নিস্তব্ধতা তা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে। আমার কেন জানি ঘুম আসছে না। মাঝে মাঝে এমনটা আমার হয়। কিন্তু আজকে কেমন যেন অস্থির অস্থির একটা ভাব লাগছে। বিষয়টা আঁচ করতে পারলেও কারণ অজানা থাকায় আমার সহ্য করা ছাড়া আর কিচ্ছু করার নেই। পাশের রুমে মায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাবা অনেকক্ষণ আগেই এসেছে। তারা হয়ত ঘুমিয়ে গিয়েছে।
`
.
______________রান্নাঘরের দিকে গেলাম একটু গরম পানি করার জন্য। এক মগ গরম পানি নিয়ে আমার ঘরে ফিরে এলাম। চায়ের লিকার দিয়ে মগ হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশে চাঁদ নেই। চারপাশটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। গুটি কয়েক তারকারাজির আবছা আলোয় এক অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
`
`
________________মেয়েটাকে রোজই দেখি। প্রতিদিন। একিভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। মাঝে মাঝে আবছায়ার সন্ধ্যায় দিগন্ত রেখার নীড়ে ফেরা পাখিদের দলে হাত বাড়িয়ে দিত। মেয়েটাকে প্রকৃতিকন্যা বললে ভুল হবে না। কত সহজ সরলভাবে প্রকৃতিতে মিশে যাচ্ছে!
`
`
______________একদিন দেখি মেয়েটাও আমাকে আড় চোখে দেখছে। হয়ত এতদিন খেয়াল করে নি। এখন যেহেতু জেনে গেছে তাকে লুকিয়ে কেউ দেখে তো একটু সতর্ক তো হবেই। অস্বস্থিও হতে পারে! তারপর প্রায় সময়ই খেয়াল করি মেয়েটা মাঝে মাঝে গোধুলীর আলোয় আমাকে দেখে.... এভাবেই আমাদের শেষ বিকেলের আলোয় একটু আধটু চোখাচোখি হতে শুরু করল।
`
`
_______________ইদানিং মেয়েটা আর ছাদে আসে না। রোজ সকালে সরু গলিটা দিয়ে কলেজে যেতে দেখি শুধু। আচ্ছা ওর কি হয়েছে? ও এমন করছে কেন? এখনো রোজ নিয়ম করে বেলকোনিতে সূর্যের বাড়ি ফেরা দেখি। কিন্তু কিসের যেন এক শূন্যতা বোধ করি। সবকিছু আর আগের মত লাগে না। ভীষণ খারাপ লাগে , তারপরও উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।
`
`
______________অনেকদিন পর আজ আবার মেয়েটা ছাদে এসেছে। কেমন যেন অচেনা অচেনা লাগছে। তারপরও গোধুলী আলোয় সেই অবয়বটা চিনতে ভুল হয় নি। মেয়েটা আজ শাড়ি পরেছে। মেয়েটা বড্ড সুন্দরী। আবছায়া আলোয় শাড়ির রংটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে বেশ মানিয়েছে। ওকে গোধুলী আলোতেই ভাল মানায়। আমি পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছি। এ যে 'শেষ বিকেলের মেয়ে'.....