Wednesday, January 13, 2016

এক শিশি ভালবাসা

সৃষ্টিকর্তা মানুষের মাঝে কিছু অসাধারণ ক্ষমতা
দিয়েছেন। প্রতিটা মানুষ এর সাথে প্রিয়মুখ গুলোর
রয়েছে আতাঁতের নিরবিচ্ছিন্ন বন্ধন॥ চোখটা নিমলীত
করলেই স্মৃতির জানলা বেয়ে উড়াউরি করে এসব
প্রিয়মানুষ। রাগ,অভিমান বা শেষ বিদায়ে হয়ত
মানুষগুলো আধাঁরের শহরে নুইয়ে যায় কিন্তু স্মৃতিগুলো
অমর হয়ে জ্বলজ্বল করে হৃদয় কুঠিরে। ইচ্ছা না থাকলেও
কোন এক অলৌকিক শক্তি বলে কাছে পরাজিত হতে হয়
মাথাচাড়া দিয়ে উঠা স্মৃতির কাছে। প্রিয় এইসব মানুষ
গুলোর কাকতলীয় ভাবে প্রত্যেকের ইউনিক পাসওয়ার্ড
আলাদা। এদের সন্তপণে পায়ের চলার শব্দ,শব্দহীন
দীর্ঘনিঃশ্বাস,পদাঙ্ক,হাসি,কান্
না,অভিমান যেন
সহস্র বছরের চিরচেনা, স্মৃতিগুলো কত আপন॥
.
ছোট্ট শিশুটি ঠিকই বুঝে নেই বাবার বাইকের ভটভটানি
কিংবা নষ্ট সাইকেলের কুচকুচানি॥
.
মাতৃভাষা গলাধঃকরণের বহু আগে বুঝে যায় জননীর
চোখের ভাষা, ভাষাগুলো ভিন্ন কেবল সন্তানই বোঝার
ক্ষমতা নিয়ে ধরণীর বুকে এসেছে॥ কোন ভাষা বলে
"বাবু,দুধ খেয়ে যায়", "বাবা মারবো বলো চুপ করে বসো!"
.
গভীর রাতে কনকনানি শীতে জবুথবু হয়ে বসে থাকা
জননী কাঠের দরজার উপর টকটকানি শুনে এক লাফে উঠে
সন্তানকে বুকে আগলে ধরে আলতোভাবে কপালে একটা
চুমু একে দিয়ে বেশ
চিন্তাভরা মুখে বলে" আসতে এত লেট করলি কেন
খোকা,পথে কোন বিপদ হয়নিতো?" তারপর এক বাসন ভাব
উড়ানো ভাত নিয়ে বলে "খোকা, আয় খাবি"। পাশের
ঘরে প্রিয়তমা হয়ত কাথাঁটা আর একটু গুছিয়ে ঘুমের
দেশে সপ্নে খুজছে কিন্তু তিরতির করে কাঁপতে থাকা
মা কিন্তু দরজায় করাঘাত শুনে চিনতে ভুল
করেননি,করবেনও না। প্রত্যেকটা মানুষের কাছে তার
প্রিয়জনের গায়ের এক শিশি গন্ধ বেশ যত্ন করে
আলমারিতে উঠিয়ে রাখে,যখন মনে পড়ে তাদের শিশি
থেকে একটু গন্ধ নেই।
.
ভাইয়ে ভাইয়ে যেখানে এক কোদাল মাটি নিয়ে
হাঙ্গামা,ভাইয়ের বিপদের গন্ধ শুকতে শুকতে সবার আগে
পৌছে যায় ভাইকে বাঁচাতে। সহদর এর রক্ত কখন
বেঈমানী করতে শিখেনী।
.
প্রবাসে থাকা ভাইটার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে
স্নেহময়ী বোন। ফ্রেমবন্দি ছবিটা দিকে নিরীহ
চাউনিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে "ভাইয়া,তোকে
অনেক মিস করিরে,তাড়াতাড়ি বাড়ি আয় না ভাই
আমার??। ওপাশে ভাইও ফ্রেমবন্দি বোনের ছবিটার উপর
আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে বলে" কেমন আছিস ছটু(ছোট
বোন),বাড়ি ফিরে তোর বিয়েটা আগে দিব,আর কটা দিন
অপেক্ষা কর মিষ্টি বোন,মাকে দেখিস,বাবার কাশিটা
বেড়েছে তাইনা?
ফ্রেমবন্দি মানুষ গুলো যেন ছবিতে কত জীবন্ত যেন এই
হাসছে একটু কাঁদে...ভালবাসা কখন ফ্রেমবন্দি
থাকেনা।
.
বেস্টফ্রেন্ড গুলোর সাথে মাত্রাতিক্ত মান-অভিমান
এর পর হয়ত অনেকদিন কথা হয়না তবুও কোন এক সময় বন্ধুর
কথা মনে পড়তেই কোন এক স্মৃতি আকড়ে ধরে বলবে "ভাই/
বোন,কেমন আছিস?তোর এত রাগ কেনোরে? তোকে
অনেক মিস করছিরে..জানিস তুই মজা করে যে ঠান্ডা দুধ
চা খাওয়ায় ছিলে আমি কখনও ভুলবোনারে,মাঝে মাঝে
আমার অনেক হাসি পাই,হাসি পাগলের মত,তুই ফিরে
আইরে""
.
প্রিয় মানুষ গুলোর অদৃশ্য অস্তিত্ব বড্ড আপন,সময়ে-
অসময়ে এরা হাজির। ছেলেটা ও মেয়েটার মাঝে
ব্রেকআপ হলেও স্মৃতিগুলো স্টিলআপ হয়ে বেচে থাকে।
কোন না কোন স্মৃতি রয়েই যায়। গাড়িটে যাওয়ার সময়
দেখা কোথা থেকে ভেসে আসছে অতি সুপরিচিত
পারফিউম এর ঘ্রাণ যেটা প্রিয়মানুষের কাছ থেকে
পাওয়া গিফট ছিল মনে পড়ে যাবে তার কথা এমন স্মৃতির
রিইউজ যে কত মোকাবেলা করতে হয় তার ইয়ত্তা নেই।
তমুখ(প্রিয় মানুষের নাম) টেইলার্স,তমুখ
পাবলিশার্স,তমুখ বইঘর,তমুখ ইন্টারপ্রাইজ,তমুখ(নতুন
ফ্রেন্ড),তমুখ সংঘ,তমুখ নামের অন্য কেউ বা তার
কমেন্ট,তমুখ.....
তমুখ গুলো দেখেই মনে পড়ে যায় পুরোনো মুখের অস্তিত্ব
মাখা শত স্মৃতি। ভালোবাসার সুতোয় গাথা অমুখ-
তমুখেরা অতি আপন।
বেচে থাক ভালোবাসা,সুখে থাক তমুখেরা।
.
অভিমানের তাড়নার বা ওপারের দেশের ভিড়ে হারিয়ে
যায় প্রিয়মানুষ গুলো,মৃত্যু হয় কেবল রক্তমাংসের এক
নিহর দেহের,মৃত্যু হয়না ভালোবাসার। ফেলে যাওয়া
স্মৃতিগুলো লেপ্টে থাকে ডাইরির পাতায় কিংবা
ফ্লাশ ব্যাক মেমোরীতে কিংবা মনের আলমারিতে
সযত্নে রাখা এক শিশি ভালাবাসা মাখা গায়ের গন্ধে।
গভীর রাতে শিশি থেকে গন্ধ ভরা স্মৃতি গুলো মেতে
উঠে অটুট হাসিতে কিংবা নিভৃতে করূণসুরে ডুকরে ডুকরে
কেঁদে চলে...

1 comment: