Wednesday, January 13, 2016

শেষ বিকেলের মেয়ে

_______________আমি তখন বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে শেষ বিকেলের আলো দেখছিলাম। প্রায় সময়ই আমি এমনটা করি। ভালো লাগে। অকারণে মন খারাপ হয়ে থাকলেও ভালো হয়ে যায়। কেমন যেন মায়ামোহ ঘোর লাগা পরিবেশ। বরাবরের মত আজ বিকেলেও তাই নিয়ম করে বেলকোনিতে গিয়েছিলাম। আমাদের পাশের এপার্টমেন্টে এক নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। আমাদের বাড়িটা একটু পুরোনো। তাই বেলকোনি সিঁড়িঘর সবকিছুই পুরোনো ধাচের। আমাদের বাড়ি আর পাশের বাড়ির মাঝ খান দিয়ে একটা সরু গলি চলে গিয়েছে।
`
`
______________২২শে ডিসেম্বর থেকে সূর্যের দক্ষিণায়ন হয়। আর তাই এই সময়টায় সূর্যটা আমাদের বাড়ির ছাদ থেকে তাদের এপার্টমেন্টের ছাদে আঁছড়ে পরে। বিষয় সেটা না! এটা প্রকৃতির নিয়ম, আমি রোজই দেখে আসছি। কিন্তু আজ যা হল তা আমি আগে কখনো ভাবিনি। সূর্য বাড়ি যাবার জন্য যখন দিগন্তটা ছুঁয়েছে তখন সে বাড়ির মেয়েটা এসে ছাদের কর্ণারে এসে দাঁড়ায়। সূর্যটা তার পেছনে পরে যায়। মেয়েটা এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল যেন তার ভেতর থেকেই সূর্যটা গোধুলী আলো ছড়াচ্ছে! অন্তত আমার দিক থেকে এমনটাই মনে হয়েছে.......
.
.
______________এখন রাত। প্রাণোচ্ছল শহরটা ঘুমিয়ে পড়েছে। চারপাশের নিস্তব্ধতা তা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে। আমার কেন জানি ঘুম আসছে না। মাঝে মাঝে এমনটা আমার হয়। কিন্তু আজকে কেমন যেন অস্থির অস্থির একটা ভাব লাগছে। বিষয়টা আঁচ করতে পারলেও কারণ অজানা থাকায় আমার সহ্য করা ছাড়া আর কিচ্ছু করার নেই। পাশের রুমে মায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাবা অনেকক্ষণ আগেই এসেছে। তারা হয়ত ঘুমিয়ে গিয়েছে।
`
.
______________রান্নাঘরের দিকে গেলাম একটু গরম পানি করার জন্য। এক মগ গরম পানি নিয়ে আমার ঘরে ফিরে এলাম। চায়ের লিকার দিয়ে মগ হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশে চাঁদ নেই। চারপাশটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। গুটি কয়েক তারকারাজির আবছা আলোয় এক অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
`
`
________________মেয়েটাকে রোজই দেখি। প্রতিদিন। একিভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। মাঝে মাঝে আবছায়ার সন্ধ্যায় দিগন্ত রেখার নীড়ে ফেরা পাখিদের দলে হাত বাড়িয়ে দিত। মেয়েটাকে প্রকৃতিকন্যা বললে ভুল হবে না। কত সহজ সরলভাবে প্রকৃতিতে মিশে যাচ্ছে!
`
`
______________একদিন দেখি মেয়েটাও আমাকে আড় চোখে দেখছে। হয়ত এতদিন খেয়াল করে নি। এখন যেহেতু জেনে গেছে তাকে লুকিয়ে কেউ দেখে তো একটু সতর্ক তো হবেই। অস্বস্থিও হতে পারে! তারপর প্রায় সময়ই খেয়াল করি মেয়েটা মাঝে মাঝে গোধুলীর আলোয় আমাকে দেখে.... এভাবেই আমাদের শেষ বিকেলের আলোয় একটু আধটু চোখাচোখি হতে শুরু করল।
`
`
_______________ইদানিং মেয়েটা আর ছাদে আসে না। রোজ সকালে সরু গলিটা দিয়ে কলেজে যেতে দেখি শুধু। আচ্ছা ওর কি হয়েছে? ও এমন করছে কেন? এখনো রোজ নিয়ম করে বেলকোনিতে সূর্যের বাড়ি ফেরা দেখি। কিন্তু কিসের যেন এক শূন্যতা বোধ করি। সবকিছু আর আগের মত লাগে না। ভীষণ খারাপ লাগে , তারপরও উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।
`
`
______________অনেকদিন পর আজ আবার মেয়েটা ছাদে এসেছে। কেমন যেন অচেনা অচেনা লাগছে। তারপরও গোধুলী আলোয় সেই অবয়বটা চিনতে ভুল হয় নি। মেয়েটা আজ শাড়ি পরেছে। মেয়েটা বড্ড সুন্দরী। আবছায়া আলোয় শাড়ির রংটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে বেশ মানিয়েছে। ওকে গোধুলী আলোতেই ভাল মানায়। আমি পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছি। এ যে 'শেষ বিকেলের মেয়ে'.....

No comments:

Post a Comment