Wednesday, January 13, 2016

লজ্জা

এক:
সকালে ঘুম থেকে উঠে ঝিম মেরে বসে থাকাটা কোন সুস্থ মানষের লক্ষণ নয়। সফিক অনেক্ষণ যাবত চোখ বন্ধ করে বসে আছে। এটাযে সে প্রতিদিন করে তা নয়। হঠাৎ হঠাৎ করতে দেখা যায়। অনেকদিন হল সে এই শহরে থাকে এবং যে মেসে থাকে সে মেসের পুরনো বাসিন্দা। তার রুমমেট মামুন। মামুন সফিকের এ রকম আচরনের সাথে পরিচিত। মানুষ হিসেবে সফিকের তুলনা হয় না। সব সময় হাসি খুশি। কারও বিপদ হলে সবার আগে এই সফিকই থাকে। তবুও কেও তাকে বেশ একটা পছন্দ করে না। হঠাৎ হঠাৎ সফিককে বড় অচেনা মনে হয়। বিভিন্ন ধরনের পাগলামি করে। সকালে এভাবে বসে থাকার মানে হচ্ছে আজ সে দিন।
দুই:
সকালে ঘুম থেকে উঠেই সব কিছুর উপর রাগ লাগতে লাগল। আজ যে হঠাৎ হচ্ছে তা না, মাঝে মাঝে সব কিছুর উপর রাগ লাগে। আশেপাশের সবাইকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে করে। আমি এই শহরে প্রায় চার বছর। চার বছরে আমি দেখেছি আশেপাশের মানুষ গুলো কিভাবে আমাকে ব্যবহার করছে। কেউ ছাড় দিতে রাজি নয়। স্বার্থপর পৃথিবী। স্বার্থপর মানুষ।গত রাতের কথাই ধরা যাক। রবিন কি ব্যবহারটাই না করলো। একসপ্তাহ আগে হঠাৎ এসে বলে-”দোস্ত, বড় বিপদে আছি, দুই হাজার টাকা ধার দে”। আমার পকেটে আছে তখন একশত টাকা যা দিয়ে আগামী তিন দিন চলতে হবে। যখন বললাম এই কথা তখন পায়ে ধরে অবস্থা।কি আর করা, মামুনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দিলাম। দুদিনের কথা বলে আর দেখা নেই। গত রাতে গেলাম ওর মেসে। গিয়ে দেখি মোবাইলে কথা বলতেছে। এক মিনিটের কথা বলে দুই ঘন্টা পর এসে দাঁত দেখিয়ে বলে “সরি দোস্ত, জরুরি কথা ছিল”। সে যে কি জরুরি কথা বললো সেই জানে। তবে মোবাইলের ও পাশে যে একটা মেয়ে ছিল বোঝা যাচ্ছে। এটা তার কত নম্বর প্রেমিকা আল্লাই জানে। টাকার কথা বললাম বলে টাকা নেই। এই দিকে মামুনের বাবা অসুস্থ। আমাকে কিছু বলে নি তবে বুঝতে পারছি তার হাত খালি। আমি সব খুলে বললাম রবিনকে। সে বলে কিনা তোরে কে বলছে আরেকজন থেকে টাকা নিয়ে দিতে। টাকা নাই, পরে আসিস। রাগে গা কাঁপতে লাগলো। বাসায় এসে প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হল। কোন রকম কিছু মুখে ‍দিয়ে ঘুম দিলাম। সকালে কাক এর ডাকে ঘুম চটে গেল। কাকটাকে গুলি করতে ইচ্ছে হচ্ছে। না রাগা যাবে না। শান্ত হও। বসে বসে নিজেকে বুঝাল সফিক।
তিন:
সারা সকাল নিজেকে বুঝিয়েও কোন লাভ হলো না। সফিক ট্রেনে করে বিশ্ববিদ্যালয় যায়। ক্লাসের সবাই এ বগিতে। কারো সঙ্গেই কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তার পাশে যে ছেলেটা বশেছে তার নাম করিম। হঠাৎ টের পেল করিম আঙ্গুল দিয়ে খোচা দিয়ে বলে “ ওই মেয়েটা দেখতে কেমন রে”। করিমের উপর প্রচন্ড রাগ হল। সবার সামনেই বলে উঠলাম “ কালা ভুত, আয়নায় কোনদিন চেহারা দেখসস? সারাদিন মেয়ে মেয়ে করস কেন?”। সাথের বন্ধুরা হেসে উঠল। লজ্জায় করিম মাথা নিচু করে রইল। বড় মজা পেলাম। মানুষের উপর প্রতিশোধ নিতে হবে।
চার:
ক্লাসে ঢুকার পথে শিরিন জিঞ্জেস করলো “ ‍কিরে সফিক, কেমন আছিস?”
আমার চোখ চক করে উঠল। আমার সকল রাগ গিয়ে পড়ল এই মেয়েটার উপর। প্রতিদিন এককথা বলার মানে কি? এই মেয়েকে আজ শিক্ষা দিতে হবে। চরম লজ্জা দিতে হবে।
আমি বললাম “ আছি আরকি! তোর কি অবস্থা, শুনলাম তোর বিয়ে নাকি আবার ভেঙ্গে গেছে?
শিরিন চোখ নামিয়ে নিল। তার বিয়ে ভাঙ্গার খবর আমি ছাড়া কেউ জানার কথা না। শিরিন আমাদের এলাকায় থাকে। দুদিন আগে শিরিনের বাবাকে দেখলাম ফরিদ সাহেবের সাথে পার্কে বসে কথা বলছেন। যাওয়ার সময় যা শুনলাম শিরিনের একটা পা একটু খাট বলে বার বার বিয়ে ভেঙ্গে। আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল তখন। কিন্তু এখন হচ্ছে না।
পাঁচ:
স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। মধ্য বয়স্ক চির সবুজ বিধান স্যার। আমাদের বিভাগে যত শিক্ষক আছেন তাদের মধ্য সম্ভবত সবচেয়ে ভাল এই বিধান স্যার। ক্লাসে ঢু্কেই সুন্দর করে হাসলেন। আমার রাগ হল। পাঁচ মিনিট পর আমি হাত উঠালাম।
স্যার বললেন- “কিছু বলবে?’
আমি সবাইকে অবাক করে বললাম- “স্যার, আপনার প্যান্টের চেইন খোলা”
স্যার সরি বলে বের হয়ে গেলেন এবং যাওয়ার আগে আবার সেই হাসি।
ছয়:
বাসায় ফিরে কোন রকম দুটা খেয়ে ঘুম দিলাম। সারাদিনে অনেক মজা লইলাম। হাহাহা...আজ লজ্জা দেওয়া দিবস।
সাত:
বিকালে টিউশনীর জন্য বের হলাম।ছাত্রের বাসা একটু দুরে। যেতে প্রায় ১ ঘন্টা লাগে। ছাত্রের নাম রনি। রনিকে বললাম পড়া দেওয়ার জন্য। একটু বলে আমতা আমতা শুরু করল। দিলাম ধমক। বেচারার মুখ কান্না কান্না হয়ে গেল। মজা লাগলো। আরও কিছু বলা যাক।
রনির মাকে ডাকালাম, বললাম-”আপনার ছেলে ‍দুনিয়ার গাধাদের মধ্য অন্যতম। একে দিয়ে পড়াশোনা হবে না। কিছু মনে রাখতে পারে না।”
ছাত্রের মা অবাক হয়ে তাকাল। রনি ফুপিয়ে কেদে উঠলো। আমার আবার মজা লাগলো।
আট:
পড়ানো শেষ করে বের হলাম। পেটে উচ্চহারে নিম্নচাপ অনুভব করলাম। তারাতারি বাসায় যেতে হবে। গাড়িগুলোতে প্রচন্ড ভীঁর। কোন রকমেই উঠতে পারছিনা। দেশের যে কি অবস্থা। কোন কিছুর নিয়ম নাই। একটা টেম্পুতে ঝুলে পরলাম। কি আর করা। আমার সাথে আরও তিনজন ঝুলে আছে। মোটামোটি কঠিন অবস্থা। টেম্পু খুব দ্রুত ছুটছে। সব কিছু পাশকাটিয়ে কি সুন্দর ছুটে চলা। বাতাসে চুল গুলো উড়ছে। বড় ভাল লাগছে।
নয়:
টেম্পু হঠাৎ মোড় নিল। কিছু বুঝে উঠার আগেই হাত ফসকে গেল। টেম্পু থেকে পড়ে গেলাম। বিপরীত পাশ থেকে আরএকটা গাড়িতে ধাক্কা খেলাম। সব কিছু অন্ধকার মনে হল। সব কিছু কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে। লোকজনের কোলাহল শুনতে পাচ্ছি। ধীরে ধীরে শব্দ গুলোও কমে যাচ্ছে। একটা বাচ্চার কথা শুনতে পেলাম। সে হাসছে। হিহি... আর বললো “আম্মু দেখ, লোকটা হিসু করে দিয়েছে”।
হাহা...শেষ সময়ে বিধাতা আমাকে এভাবে লজ্জা না দিলেও পারতেন......

No comments:

Post a Comment