Wednesday, January 13, 2016

একটা জন্মদিন একটু দুষ্টুমি

ভালোবাসা শব্দটা আমাদের মনে এক স্বর্গীয় অনুভূতি জাগায়। আর এই ভালোবাসা যার জন্য আমাদের কাছে সে একদিকে আর পৃথিবীর সবকিছু অন্যদিকে থাকে। তেমনি আমার ভালোবাসার মানুষটাও আমার কাছে সবচেয়ে দামী। ওর নাম অধরা। আজ অধরার জন্মদিন। সে এদিনই পৃথিবীতে এসেছিলো। আল্লাহর কাছে মনে মনে অসংখ্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম এই মেয়েটিকে আমার জীবনে এনে দেওয়ার জন্য। কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম অধরার জন্মদিনে ওকে সারপ্রাইজ দিবো।তাই একটা প্লান করলাম মনে মনে।অধরা আমাকে সত্যিই ভালোবাসে কিনা সেটা একটু পরীক্ষা করার জন্য তাকে অন্য নাম্বার থেকে ভয়েস পরিবর্তন করে ফোন দেই।কয়েকদিন ধরেই ওকে অন্য নাম্বার থেকে কল দিয়ে বিরক্ত করছি। কিন্তু আজ ওর জন্মদিন বলে শেষবারের মত ডিস্টার্ব করে তারপর তাকে সব বলে দিয়ে সারপ্রাইজ দিবো। তাই সকাল সকাল ফোন দিলাম অধরাকে,
.
---আপনাকে কতবার বলেছি আমাকে ফোন দিবেন না।আপনি আমার ধর্মের ভাই হন, আমাকে আর জ্বালাবেন না প্লিজ।
---প্লিজ আপনি রাগ করবেন না।মানুষকে রাগানো ইতর প্রজাতির লোকের কাজ।আমি ইতর না, আমি মানুষ
.
---কিইইই বললি!!! ঐ বজ্জাতের হাড্ডি!! একবার আমার সামনে আয়, তোকে সন্ন্যাসী বানিয়ে জঙ্গলে ছেড়ে আসবো।
---আহ্হা!! শান্ত হোন! আমিতো ইতোমধ্যে আপনার প্রেমে সন্ন্যাসী হয়েই আছি।আপনার ভালোবাসার রং আমার অস্তিত্বে ঢুকে গেছে।আমি আপনার ভালোবাসার বৃত্ত হতে বের হতে পারছি না। দয়া করে আমাকে তুমি করে বলার অনুমতি দিন।
.
অধরার মেজাজটা গরম হচ্ছে। নাহ!! এখনই মেজাজ খারাপ করলে চলবে না। আমাকে কঠিন কিছু কথা বললে আর কাজ হবেনা মনে হচ্ছে তার। তাই অধরা শান্ত হয়ে আমাকে বলে,
.
---ভাইজান, অনুমতির কথা বাদ দেন.. আপনি কি সকালে নাস্তা করেছেন ?
---জি না, সকালে নাস্তা করতে পারি নাই।তবে আপনি হুকুম দিলে নাস্তা করবো।আপনাকে ফোন না দিলে আমার নাস্তা হজম হয়না, বমি হয়।
---সমস্যা নাই আমার কাছে বমির বড়ি আছে।লোক পাঠিয়ে নিয়ে যাবেন আর ঠিকঠাক মত নাস্তা করবেন।নইলে শুকিয়ে যাবেন আর শুকনা মানুষ আমার পছন্দ না। বোঝা গেল জনাব??
.
---জী বুঝেছি মেমসাহেব।
---তা, মহাশয় সাহেব, আপনি এত সকালে আমাকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করতেছেন কেনো?আপনাকে তো সকাল বিকাল দুইবেলা করে নিয়মিত ঝাড়ুপেটা করা উচিত।আপনার গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে মাথা ন্যাড়া করে সারা বাংলাদেশ সাত বার ঘুরানো দরকার।
---অধরা তুমি হঠাৎ এরকম করছো কেন? তোমার কি হইছে?
---হারামি, আবার কথা বলতেছোস!!
এত্ত সাহস তোর আমাকে নাম ধরে ডাকছোস!! তোর সাথে এরকম কথা বলবো নাতো কি প্রেমের কথা বলবো? আর কোনো দিন ফোন দিলে তোর হাড্ডি ভেঙ্গে ফেলবো, ইতর ছোটলোক..!!!
.
উফফ!! কিইই রাক্ষসী মেয়েরে বাবা!!
আমিও হাল ছাড়িনাই। আজ শেষবারের মত দেখবো অধরার মেজাজটা কেমন হয়।
.
অধরাকে আবার ফোন দিলাম...
---আপনাকে কিভাবে অপমান করলে আপনি আমাকে ফোন দিবেন না। মানুষকে যন্ত্রনা দিয়ে আপনার কোন লাভ আছে? (অধরা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে)
.
---অপমান করা ভদ্র মানুষের কাজ না। যেহেতু আমি আপনাকে ভালোবাসি তাই আমি আপনার অপমান সহ্য করব।
কারন যখন আপনি আমার বউ হবেন তখন তো আর অপমান করবেন না হিহিহি!!
---আপনার মতো ইতর ছোটলোক নিম্ন প্রজাতির প্রাণীকে কে বিয়ে করবে? আমি..? খামাকা আমারে বিরক্ত করবে না। আমি আপনার পায়ে পড়ি।
.
---দেখো, অধরা তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। তোমার জন্য যদি একশো বছরও সাধনা করতে হয় আমি করবো। তোমাকে না পেলে ছয় তলার উপর হতে লাফ দিবো (হায় হায় আমি ইহা কি বলিলাম)
---আপনি বরং এভারেস্ট এর উপর হতেই লাফ দেন জনপ্রিয় হয়ে যাবেন।
শোন হারামি, তোকে আপনি আপনি বলে বলছি বলে তোর গায়ে লাগছে না। তুই একশো বছর কেন এক কোটি বছর সাধনা করলেও আমার মনের একশ কোটি গজের মধ্যেও আস্তে পারবি না।
তোর সাথে দেখা হলে এক হাজার একটা থাপ্পড় দিতে ভুলব না। বুঝলি!! তুই এবার ফোন রাখ। তোর সাথে প্যাঁচাল পারার টাইম নাই।
.
অধরা ফোন রেখে দিলো। আমি জানি অধরা একটু পর আমার সাথে দেখা করতে বের হবে। আর এখন সাজগোজ করবে তাই নিজের রূমে আয়নার সামনে নিজেকে সাজাচ্ছে হয়তো।
যাহোক পরীক্ষা শেষে বুঝলাম, অধরাকে অন্য কোনো ছেলে পটাতে পারবেনা। মনে মনে খুব খুশিই হলাম। নিজেকে আজ খুব ভাগ্যবান মনে হলো। নাহ!! আমার বাবুটাকে অনেক জ্বালাইছি, আর না। বেচারিকে একটু রেস্ট দেই।
.
আমার ফোন আবার বাজছে..! এবার দেখি অধরা আমাকে ফোন দিচ্ছে আমাকে,,,
.
---হ্যালো জান!! কি করছো? কখন আসবা তুমি? একদম ১০টায় তুমি রেস্টুরেন্টে থাকবা। একমিনিট দেরি হলে কিন্তু তোমাকে ১০বার করে কানে ধরে উঠবস করতে হবে।
---জান, তাহলে তো আমাকে একশো বার উঠবস করতে হবে কারন আমার ১০মিনিট দেরি হবে।
---ফাজলামি রাখো, তাড়াতাড়ি আসো বুঝছো?
.
আমি দশ মিনিট দেরি না বরং দশ মিনিট আগেই রেস্টুরেন্টে এসে বসে বসে অপেক্ষা করছি অধরার জন্য। অধরা আমার দিকে এগিয়ে আসছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। এসেই আমাকে বলল,
.
---বাহ!! আজ তোমাকে জিন্স-টিশার্টে অন্যরকম লাগছে। আজ প্রথম তুমি আমার আগে আসছো তাই তোমাকে এত্তোগুলো থ্যাংকস!!
---শোনো, তোমাকে একটা ইম্পোর্টেন্ট কথা বলবো।
---তাড়াতাড়ি বলে ফেলো।
----তুমিতো জানো আমার আব্বু অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। আব্বু আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। তাই আব্বুর জন্যই আগামী মাসে আমি অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাচ্ছি। তুমি আমাকে ভুলে যাও।
---ওহহ, তারমানে তুমি কি ব্রেকআপ চাচ্ছো?
--হ্যা,তুমি বরং অন্য কাউকে খুঁজে নিও। আমি চাচ্ছি আমাদের রিলেশন এখানেই শেষ হোক।
.
দেখলাম অধরার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। আমার এই পাগলামীর জন্য বেচারী অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আমিও এখন কষ্ট পাচ্ছি।আমি ওকে একটা চিরকুট দিয়ে বললাম,
---তুমি রেস্টুরেন্টের বাইরে গিয়ে এই কাগজটা পড়বে। পড়ার পর যদি মনে করো আমি সঠিক তাহলে আমাকে এসে একটা ধন্যবাদ দিয়ে যাইও।
.
অধরা বাইরে গিয়ে চিরকুট টা পড়ছে। তাতে আমি লিখেছিলাম,
"অধরা তুমি এতো বোকা কেন? এজন্যই তো তোমাকে আমি এতো ভালোবাসি পাগলী।আমার ভয়েস পরিবর্তন করে অন্য নাম্বার থেকে ফোন করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তোমাকে আমি পটাতে চাইছিলাম। দেখলাম, তুমি আমাকে এত্তো ভালোবাসো যে তোমাকে অন্য ছেলেরা কখনো পটাতেই পারবেনা। আর এটাও দেখছিলাম তুমি কষ্ট পেলে কি কি করো। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ জান। তোমাকে একটু কষ্ট দিলাম কারণ কষ্টের পর একটু সুখকে ও অনেক বেশি মনে হয়।
.
অধরা ভেতরে চলে আসতেই আমি হাঁটুগেরে বসে তার হাতে একটা গোলাপ দিয়ে বললাম,
"Thinking Of You With Love On Your Birthday And Wishing You Everything That Brings You Happiness Today And Always.. Happy Birthday To You My Sweetheart".
.
এবার দেখি অধরার চোখে আনন্দ অশ্রু জ্বলজ্বল করছে।জল মুছে আমার গোলাপটা হাতে নিয়ে আমাকে বললো,
"When I Am With You, I Feel I'm In Heaven...There Were Times You Make Me Cry...There Were Times You Make Me Fly..Stay With Me Until I Die..Stay With Me Forever"

No comments:

Post a Comment