Wednesday, January 13, 2016

আনন্দ অশ্রু

আবাসিক হোটেলটার সামনে এসে বাইকটা থামিয়ে ফেলল রিয়ান।
আজ হঠাত্ করেই রিয়ানের ওই হোটেলে প্রবেশ করতে ইচ্ছে হচ্ছে। প্রায় অনেক বছর যাবত রিয়ান এই এলাকায় থাকে। একটু ফাজিল টাইপের হলেও রিয়ান ওই আবাসিক হোটেলের দিকে চোখ তুলেও তাকায় না।
আজকে হঠাত্ করেই বাইকটা থামিয়ে ভিতরে চলে গেল রিয়ান।
কিরকম অজানা একটা কিছু ওকে টানছে?
তাই রিয়ান আর ফিরতে পারনি।
আজ রিয়ানের খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে কেন এই অন্ধকার ঢুকছে মেয়েরা। এই জঘন্য কাজ ছাড়া আরও অনেক কাজও তো করতে পারে?
...
কিছুক্ষণ পর রিয়ান একটা ঘরে প্রবেশ করলো, ও ঠিক যেই রকমটা খুজঁছে সেই রকম একটা মেয়ে পেয়েছে।
মেয়েটা খাটের এককোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।
রিয়ার একটু ইতস্তত হয়ে মেয়েটার কাছে গেলো। রিয়ানের খুব খারাপ লাগছে, কি জানে মেয়েটা ওকে কি ভাবছে?
,,,
- এইযে শুনছেন আমি রিয়ান। পাশেই থাকি। কলেজে পড়ি। আগে কখনও আসিনি, আপনার নামটা একটু বলবেন?
> ঋতু। এতক্ষণে মেয়েটা রিয়ানের দিকে তাকিয়েছে।
- অদ্ভুদ এই মায়াবী চাহনী দেখে রিয়ান একটু অস্বস্তি বোধ করে। ও ভাবে, এত মায়াবী একটা মেয়ে এরকম একটা জঘন্য কাজে লিপ্ত?
আচ্ছা আপনি এরকম কাজ করেন?
> আপনি এত প্রশ্ন কেন করছেন? আপনি যা করতে এসেছেন তা করে চলে যান? আপনি যদি ভালো হতেন তাহলে এরকম একটা জায়গায় কেন?
- না না বিশ্বাস করুন। আমি কিছু করতে আসিনি। আমি ততটা খারাপ না। আমি শুধু জানতে এসেছি।
> সত্যি আপনি কিছু করবেন না। (চোখের জল যেন বেরিয়ে আসলো)
- নাহ। বিশ্বাস করতে পারেন।
> বিশ্বাস করুন, আমি পতিতা না। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। বলতে কেদেঁই ফেলল ঋতু।
-রিয়ান কিছু বলতে পারছে না।
,,,
মেয়েটার নাম ঋতু। ও গ্রামে থাকে। ওদের পরিবারে ওরা এক ভাই এক বোন।
ঋতু পরিবারের সাংসারিক খুব একটা ভালো না।
এরই মধ্যে ঋতুর ছোট ভাইটা অসুস্থ হয়, আর তাকে অপারেশন করার জন্য প্রায় পাচঁ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়।
কিন্তু ঋতুর পরিবারের এতগুলো টাকা দেয়ার ক্ষমতা ছিলোনা। তাই তার বাবা ওদের এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ঋণ নেয়, বিনিময়ে ঋতুকে ওদের বাসায় থেকে ওদের বাচ্চাগুলোকে দেখাশুনার কাজ করতে হবে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হয় ঋতু।
এরপর ঢাকায় এনে এই আবাসিক হোটেলে দিয়ে চলে যায় ঋতুকে।
,,,
ঋতু প্রথমে বুঝতে পারেনি, কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছে তখন ঋতুকে একটা ঘরে বন্দী করা হয়েছে।
,,,
এসব শুনতে শুনতে রিয়ানের চোখ দিয়ে কখন জল চলে আসলো সে নিজেও বলতে পারেনা?
,,,
- আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে আপনার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।
> সত্যি বলছেন?
- হ্যাঁ। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
,,,
একথা বলেই রিয়ান বেরিয়ে আসলো ওই ঘর থেকে। ঋতু তবুও কাদঁছে, ভাবছে আদৌ কি রিয়ান কিছু করবে? নাকি আর আসবেনা।
,,,
রিয়ান হোটেলের বাইরে আসলো। ওর মাথায় বাজ পরেছে। ঋতুকে ওখান থেকে আনতে তিন লক্ষ টাকার প্রয়োজন।
কিন্তু এই মুহুর্তে রিয়ানে পকেটে তেমন টাকা নেই।
বাসায় কিছু বলতে পারবেনা এই সর্ম্পকে।
কিন্তু মেয়েটাকে সে কথা দিয়েছে।
আজ রাতেই টাকা জোগাড় না করলে, মেয়েটা ওকে খুব খারাপ ভাববে। আবারও কারো উপরে বিশ্বাসের মর্যাদা হারাবে।
,,,
পরদিন সকালে রিয়ান হাসিমুখে যাচ্ছে আবাসিক হোটেলটার দিকে, যাবার পথে একটা কালো বোরখা কিনেছে রিয়ান।
কালো বোরখা পরা মেয়ে রিয়ানের খুব পছন্দের। ঋতুকেও খুব ভালো লাগবে।
.
হ্যাঁ, রিয়ান তার পছন্দের বাইকটা বিক্রি করেছে।
আর সেই টাকা দিয়েই ঋতুকে ফিরিয়ে আনবে।
,,,
কিছুক্ষণ পর রিয়ান ঋতুর সামনে এসে দাড়ালো। ঋতুর বিশ্বাস হচ্ছেনা কিছুতেই। বিশ্বাস হচ্ছেন ও আবার ওর মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খাবে।
রিয়ান বোরখাটা এগিয়ে দিলো, এবং তাড়াতাড়ি বাইরে আসতে বলল।
ঋতুকে বোরখায় এত সুন্দর লাগছিলো রিয়ান যেন স্বপ্নে কাউকে দেখছে।
।।
অতঃপর ঋতুকে নিয়ে রিয়ান ওদের বাড়িতে চলে এলো।
ঋতুকে এতদিন পর কাছে পেয়ে ওর বাবা-মা খুব খুশি হল। এতদিন পরে আপুকে দেখে ওর ভাইটাও অনেক খুশি।
ঋতুর মা কাদঁছে, কিন্তু কান্নাটা সুখের। রিয়ান একটু দূরে দাড়িয়ে এসব দেখছে। সবাই পেয়ে ঋতু যেন রিয়ানকে ভূলেই গেলো।
রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পিছন দিকে হাটঁতে লাগলো। রিয়ানে বুকটা যেন আজ ব্যথা করছে।
খুব দামী কিছু একটা আজ ও রেখে যাচ্ছে।
অজান্তেই চোখের দুফোটা জলের অস্তিত্ব পেলো রিয়ান।
এমন সময় কেউ একজন পিছন থেকে ডাক দিলো। ডাকটা খুব চেনা রিয়ানের।
রিয়ান দাড়ালো।

> বাহ। খুব ভালো। না বলেই চলে যাচ্ছেন।
- আমারতো আর কাজ নেই। তাই চলে যাচ্ছি।
> আপনার ঋণটা পরিশোধ করার সূযোগটা দিবেন না?
- সারাজীবন থাকলে দিতে পারি?
> সত্যি কি তাই রাখবেন?
- হুম। এবারও বিশ্বাস রাখতে পারেন।
,,,
তারপর রিয়ান আলতো করে ঋতু কোমল হাতটা ধরলো। ঋতুর চোখে এবার খুব আনন্দের দুফোটা অশ্রু জমা হলো। আর রিয়ান তা মুছে সারাজীবনের জন্য কাছে টেনে নিলো ঋতুকে।
এবার আপনি ডাকা থেকে তুমি করে ডাকার পালা।।

No comments:

Post a Comment